যদি চান সন্তান নামাজি হোক, এই ভুল থেকে সাবধান!

সন্তানকে নামাজের প্রতি আকৃষ্ট করতে চাইলে অভিভাবকদের উচিৎ পার্থিব বিষয়ে অতিরিক্ত আসক্তি থেকে বিরত থাকা এবং দুনিয়া ও আখিরাতের মাঝে ভারসাম্য বজায় রাখা। বস্তুগত ভোগ-বিলাসে ডুবে যাওয়া নামাজে গাফিলতার বড় কারণ হতে পারে। তাই পরিবারগুলোকে এমন জীবনধারা গঠন করতে হবে যেখানে দুনিয়াবি ভোগ-বিলাসিতা সীমিত, ভারসাম্যপূর্ণ ও আখিরাতমুখী হয়।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: কালামশাস্ত্রের একজন বিশিষ্ট গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন আবুল ফজল সাজেদী ধারাবাহিক আলোচনায় নতুন প্রজন্মকে নামাজের প্রতি আকৃষ্ট করার কার্যকর পন্থাগুলো উপস্থাপন করেছেন, যা বিভিন্ন পর্বে আমাদের প্রাজ্ঞ পাঠকদের জন্য প্রকাশিত হবে।

পার্থিবমুখী জীবনধারা ও ভোগবিলাসের প্রভাব
সম্মানিত পিতা-মাতা, যদি চান সন্তানদের মধ্যে নামাজের প্রতি ভালোবাসা গড়ে উঠুক, তাহলে নিজেদের জীবনধারায় দুনিয়াবি মোহ ও ভোগবিলাসের বাড়াবাড়ি পরিহার করুন।

আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইরশাদ করেছেন:

وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ
“দুনিয়ার জীবন তো ধোঁকার সামগ্রী ছাড়া কিছুই নয়।”
[সূরা আল-হাদীদ, ৫৭:২০]

কুরআনের সতর্কবার্তা:
নামাজকে অবহেলা করার বিষয়টি স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে:

وَإِذَا رَأَوْا تِجَارَةً أَوْ لَهْوًا انْفَضُّوا إِلَيْهَا وَتَرَكُوكَ قَائِمًا ۚ قُلْ مَا عِنْدَ اللَّهِ خَيْرٌ مِنَ اللَّهْوِ وَمِنَ التِّجَارَةِ ۚ وَاللَّهُ خَيْرُ الرَّازِقِينَ
“তারা যখন ব্যবসা-বাণিজ্য বা খেলাধুলা দেখে, তখন তোমাকে দাঁড়ানো অবস্থায় ফেলে রেখে সেদিকে ছুটে যায়। বলো, যা আল্লাহর কাছে আছে তা খেলাধুলা ও ব্যবসার চেয়ে উত্তম। আর আল্লাহই উত্তম রিজিকদাতা।”
[সূরা আল-জুমুআ, ৬২:১১]

এই আয়াত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, নামাজের সময় অন্য সব কিছু বাদ দিয়ে নামাজে মনোযোগী হওয়া অপরিহার্য।

নামাজ বিমুখতার পেছনে পার্থিব আসক্তি
পবিত্রবকুরআনে আরও এসেছে:
فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا
“তাদের পর এমন উত্তরসূরীরা এল, যারা নামাজকে অবহেলা করল এবং খেয়াল-খুশির অনুসরণ করল। অচিরেই তারা ধ্বংসের সম্মুখীন হবে।”
[সূরা মারইয়াম, ১৯:৫৯]

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় অনেক মুফাসসির বলেছেন—নামাজ ত্যাগের মূল কারণ হল ‘শাহওয়াত’ বা প্রবৃত্তির অন্ধ অনুসরণ। এটি ধীরে ধীরে মানুষকে নামাজ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

হাদীসের আলোকে সতর্কতা
ইমাম জাফর আস-সাদিক (আ.) বলেছেন,
إن الصلاة عمود الدين، إن قُبلت قُبل ما سواها، وإن رُدّت رُدّ ما سواها
“নামাজ দ্বীনের স্তম্ভ। যদি তা কবুল হয়, তবে অন্যান্য আমলও কবুল হবে; আর যদি তা প্রত্যাখ্যাত হয়, তবে বাকি আমলও প্রত্যাখ্যাত হবে।”
[উসুলে কাফি, খণ্ড- ৩, হাদীস- ৩]

পরিশেষ ও পরামর্শ
পরিবারে যদি লোভ, ভোগ, সাজসজ্জা, অনুষ্ঠান ও অনর্থক বিনোদনের আধিক্য থাকে, তাহলে তা সন্তানদের মাঝে ইবাদতের প্রতি উদাসীনতা সৃষ্টি করে। অথচ ইসলাম ভোগ-বিলাসকে নিষিদ্ধ করেনি, বরং নির্দেশ দিয়েছে পরিমিত ও ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবহারের।

সুতরাং, একজন অভিভাবক হিসেবে আপনার দায়িত্ব হবে—জীবনধারায় এমন একটি ভারসাম্য রক্ষা করা, যা সন্তানকে আল্লাহমুখী, নামাজি ও পরকেন্দ্রিক করে গড়ে তোলে।

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha